প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে মিয়ানমারের শরণার্থীদের অস্থায়ী পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে মিয়ানমারের শরণার্থীদের অস্থায়ী পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন
...... ♥
শনিবার হোটেল ব্যারিসার হফ-এ ৫৩তম নিরাপত্তা সম্মেলনের সাইড লাইনে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলের সঙ্গে এক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় এই আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের শরণার্থীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে। কিন্তু পর্যটন শহর কক্সবাজারে তাদের অবস্থান ও কর্মকান্ডের কারণে সেখানকার পরিবেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্যানিটেশন ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটছে যা তাদেরও অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য করছে। তিনি বলেন, ‘কাজেই বাংলাদেশ সরকার তাদের একটি উন্মুক্ত, স্বাস্থ্যকর এবং নাগরিক সুবিধা সম্বলিত স্থানে সরিয়ে নিতে চায়।’ এ জন্য জার্মানি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রায় ঘন্টাকালব্যাপী এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নেতৃবৃন্দ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াবলী, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক জোরদার, উন্নয়ন, শরণার্থী সমস্যাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলরকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে লিঙ্গ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়ে অবহিত করেন। বৈঠকের পর দেশে বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সিস্টেমের আরো আধুনিকায়ন দু’দেশের মধ্যে একটি সমাঝোতা স্মারক এবং দু’দেশের মধ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জার্মান সরকার ও জনগণের সমর্থনের কথা স্মরণ করে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলকে দুঃসময়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান। স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, স্বাস্থ্যসেবা ও স্যানিটেশন, লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্যসমূহ জার্মানির চ্যান্সেলরকে অবহিত করেন। শেখ হাসিনা মারকেলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে মারকেল তা সাদরে গ্রহণ করেন এবং ভবিষ্যতে দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসার আগ্রহ ও প্রকাশ করেন, বলেন প্রেস সচিব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন এবং জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দেশের শিল্পায়ন ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সারাদেশের একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এ সময় জার্মানির উদ্যোক্তাদের এই সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন অংশদারিত্ব সৃষ্টিতেও এগিয়ে আসার আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে শ্রমিকদের কল্যাণে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলোতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধা প্রদানের কথাও জানান।
জার্মানির চ্যান্সেলর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক আগামীর দিন গুলোতে আরো দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দু’দেশের মধ্যকার স্বাক্ষরিত এদিনের সমঝোতা স্মারকের আওতায় জার্মানি বাংলাদেশকে প্রায় ৫০ লাখ ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করবে এবং ‘জেডিআই’ অনুযায়ী উগ্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে উভয় দেশ একযোগে উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং সন্ত্রাস দমনের বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক বিনিময় করবে।
প্রধানমন্ত্রী ৫৩তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে তিন দিনের সরকারি সফরে জার্মানীতে অবস্থান করছিলেন।

Comments

Popular posts from this blog

দেশের ৩১টি জেলার ও ৭৮টি উপজেলায় বিআরটিসির বাস চলাচল করছে

গাইবান্ধা-১ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী

প্রান্তিক চাষীদের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা