২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

পদ্মার মাওয়া প্রান্তে 'পাইল ড্রাইভ' স্থাপনের কথাছিল গত ৮ ফেব্রুয়ারি; কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কারণ, যে স্থানে পাইল ড্রাইভ স্থাপনের কথা, গত বর্ষায় সেখানে মাটি পরীক্ষার 'পাইল পাইপ' ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া অংশ মাটির নিচ থেকে তোলার পরই বসানো হবে পাইল ড্রাইভ।এমন অনেক বাধা সরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ। মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৩৮ দশমিক শূন্য ৫ ভাগ। কারিগরি ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার কারণে কখনও কখনও কাঙ্ক্ষিত গতিতে কাজনা হলেও নির্মাণ-সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, নির্ধারিত সময় ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। বাস্তবে রূপ পাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ১৯৯৮ সালে পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালের ৪ জুলাই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর অর্থের জোগান না হওয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে নতুন করে আশা জাগে; কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। আবারও ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়ে সেতুর ভবিষ্যৎ। এরই মধ্যে বিশ্বকে অবাক করে বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় ২০১৩ সালে। অসাধ্য সাধনের দুরন্ত সাহসে সব অনিশ্চয়তা দূর হয়। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ষড়যন্ত্রের বাধা জয় করা পদ্মা সেতুকে এখন মোকাবেলা করতে হচ্ছে কারিগরি ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছর একাধিকবার আশা প্রকাশ করা হয়েছিল, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর অবয়ব স্পষ্ট হবে। অন্তত দুটি পিয়ারের (সেতুর পিলার) কাজ শেষ হবে। ৩৭-৩৮ ও ৩৮-৩৯ নম্বর পিলারের ওপর বসবে 'সুপার স্ট্রাকচার'। প্রস্তুত করা হয়েছিল দুটি 'ট্রাস' (সেতুর উপরিভাগের ইস্পাত কাঠামো)। আশা করা হয়েছিল, ফেব্রুয়ারি নাগাদ এগুলো পিয়ারের ওপর বসানোর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে; কিন্তু এখনও তা সম্ভব হয়নি।
নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী জানান, 'পাইল গ্রাউটিং'য়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পিয়ার নির্মাণে সময় লাগছে। এ সমস্যা দূর করে পিলার নির্মাণ করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। নদীর বুকে সেতুর অবয়ব দৃশ্যমান হতে তাই বর্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। সমস্যার কথা স্বীকার করেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'প্রত্যেক প্রকল্পেই কারিগরি জটিলতা থাকে। পদ্মা সেতুতেও আছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।'তবে এতে কত সময় লাগবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তিনি বলেন, 'সমস্যা সমাধানে বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন সমাধান খুঁজেবের করছেন। আমরা সেগুলো প্রয়োগ করছি। এতে কিছুটা সময় লাগবেই।' তিনি আরও বলেন, 'পদ্মায় প্রতিটি সমস্যা ইউনিক। দেশের অন্যান্য সেতুর সঙ্গে এর মিলনেই। পরামর্শক, বিশেষজ্ঞ কমিটি, সেনাবাহিনী, ঠিকাদার সবাই মিলে সমস্যাগুলো সমাধান করছি। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।'পদ্মা সেতু নির্মাণে ২৬৪টি পাইলিং করতে হবে। নদীতে থাকবে ৪০টি পিলার। এর জন্য ছয়টি করে মোট ২৪০টি পাইল করা হচ্ছে। নদীর দুই তীরে 'ভায়াডাক্ট' ও সেতুকে যুক্ত করতে আরও দুটি পিলার থাকবে। এতে লাগবে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল। ১৮৫টি পাইল টিউব নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। নদীর বুকে পাইলের কাজ শেষ হয়েছে ৪৩টি। পাইলের ওপর বসে 'পাইল ক্যাপ'। তারওপর নির্মাণ করা হবে পিলার। তার ওপর 'পিয়ার ক্যাপ'। কাপের ওপর বসবে ইস্পাত নির্মিত ১৫০ মিটার দীর্ঘ একেকটি ট্রাস। ট্রাসের ওপর কংক্রিটের 'সেগমেন্টের' মাধ্যমে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

Comments

Popular posts from this blog

দেশের ৩১টি জেলার ও ৭৮টি উপজেলায় বিআরটিসির বাস চলাচল করছে

গাইবান্ধা-১ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী

প্রান্তিক চাষীদের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা