নিরপেক্ষ কমিশন নয়, বিএনপির চাই যেকোন মূল্যে জয়!- আশরাফ সিদ্দিকী বিটু 

নিরপেক্ষ কমিশন নয়, বিএনপির চাই যেকোন মূল্যে জয়!- আশরাফ সিদ্দিকী বিটু 
................♣
বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিষয়াবলির উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের ১১৮ ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।” ৬ ফেব্রুয়ারি সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো আবদুল হামিদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের মধ্যে প্রশংসনীয় ভাবে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত একজন নারী কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। শুরু থেকেই বিএনপি সার্চ কমিটি গঠন ও কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে সমালোচনা করেছিল। তবে সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করেছিল। তাদের সমালোচনার কোন যোক্তিক ভিত্তি নেই কারণ সার্চ কমিটির শুধু সুপারিশ করার অধিকার আছে। তাও রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া নামগুলোই সার্চ কমিটি যাচাইবাছাই করে সুপারিশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করেছে। রাষ্ট্রপতি তার সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে এই নিয়োগ দিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হবার সাথে সাথে সার্চ কমিটির কাজও শেষ হয়ে গেল। কিন্তু এই অযাচিত বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে বিএনপি শুধু নিজেদেরকেই বিতর্কিত করল।২০১২ সালে সার্চ কমিটি করার পর শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করা হয় কিন্তু এবার বিশিষ্টজনদের সাথেও আলোচনা করা হয়। সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম সুপারিশ করে। রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া সুপারিশকৃত নাম থেকেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন যাতে বিএনপি থেকে প্রস্তাবিত ব্যক্তিও আছে। ৬ ফেব্রুয়ারি রাতেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, সিইসি হিসেবে যাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সুপারিশে তার নাম ছিল না। তবে কমিশনার হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে বেগম কবিতা খানম ও শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী এবং বিএনপি থেকে মাহবুব তালুকদার ও ড. তোফায়েল আহমেদের নাম প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে মাহবুব তালুকদার ও বেগম কবিতা খানমকে রাখা হয়েছে। শুধু সার্চ কমিটিই নয় নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও তারা আগেভাগেই বিরুপ মন্তব্য করে রেখেছিল। খালেদা জিয়া ২১ জানুয়ারি বলেছিলেন, সরকারি দলের ইচ্ছা পূরণে নির্বাচন কমিশন গঠন করলে দেশের মানুষ মানবে না। আবার বিএনপি অন্য নেতারা আগেই আন্দোলনে হুমকি দিয়েছিলেন, তারা নাকি রাস্তায়ও নামবেন। নতুন ইসি নিয়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট প্রতিক্রিয়ায় জানালো, তারা নিরাশ ও হতাশ। এই কমিশন নাকি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না। বিএনপি এও বলছে, সাংবিধানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী দুটি বিষয় ছাড়া (প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ) অন্য সব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করতে পারি বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দেরই প্রতিফলন ঘটেছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও এই প্রধানমন্ত্রীর সাথে রাষ্ট্রপতি পরামর্শ করেই ইসি নিয়োগ দিয়েছিল। এই ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। তাই এই যুক্তি অর্থহীন। এই প্রক্রিয়া ছাড়া আর কি ভাবে ইসি গঠন করা যেত বা যায় তা কিন্তু বিএনপি জানায়নি। আসলে সংবিধান মতে আর অন্য ব্যবস্থাও নেই। যদি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে তবে বিএনপির প্রস্তাবিত নাম থেকে কমিশনার নিয়োগ পেল কি করে? অথচ ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়াই বলেছিলেন, পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়া সার্চ কমিটি তো নয়ই, অন্য কোন দলের প্রস্তাব শুনেননি। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে কোন ব্যবস্থাই নেননি বরং ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে আজিজ মার্কা কমিশন গঠন করে ১ কোটি ২৩ লাখ ভূয়া ভোটার বানিয়ে ছিলেন।একজন মুক্তিযোদ্ধা সিইসি নিয়োগ পাওয়ায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের আতেঁ ঘা লেগেছে। জামায়াত এটা মানবে না কোন দিনই। বিএনপির ১৩ দফা আমাদের মুক্তিযু্দ্ধের চেতনা বিরোধী, এই দফাগুলোতে স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। যা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আসলে বিরোধিতা করাই তাদের কাজ। তাদের সব চাই। বিচার মানি কিন্তু তাল গাছ আমার। ইসিগঠন তারা আইনের দাবী জানাতে পারত, কিন্তু সে দাবী তুলেই নাই।বিএনপি যখন এই ইসি নিয়ে এত কথা বলছে, তখন তাদের মনে করা উচিত, কিভাবে জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করেখালেদা জিয়া নির্বাচনী কাঠামোকে কলঙ্কিত করেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে তারা ক্ষমতায় যাবার হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করেছে। তাদের সময়কার নির্বাচন কমিশনগুলো ক্ষমতায় যাবার নীলনকশার অংশবিশেষ। উদারতা বা অন্য দলের দাবীর প্রতি কোন শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেনি কখনই। সুতরাং, আজকে তাদের মুখে নৈতিকতার কথা বড়ই বেমানান শোনায়।

Comments

Popular posts from this blog

গাইবান্ধা-১ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী

শিক্ষা খাতে সাফল্য ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ৮ বছর

প্রান্তিক চাষীদের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা