র‌্যাবের অভিযানে গাজীপুর কালিয়াকৈর নীট প্লাস গার্মেন্টস এর ভল্ট ভেঙ্গে প্রায় ৩ কোটি ৪১ লক্ষটাকা ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারীসহ ০৬ জন গ্রেফতার

র‌্যাবের অভিযানে গাজীপুর কালিয়াকৈর নীট প্লাস গার্মেন্টস এর ভল্ট ভেঙ্গে প্রায় ৩ কোটি ৪১ লক্ষটাকা ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারীসহ ০৬ জন গ্রেফতার ॥ ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা, ০১টি অস্ত্র, ০৫ রাউন্ডগুলি উদ্ধার এবং লুটের টাকায় ক্রয়কৃত ০১টি ট্রাক ও গার্মেন্টস মেশিনারীজ জব্দ
....................
গত ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ইং তারিখ দিবাগত রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাকের নীট প্লাস লিঃ গার্মেন্টসে দুর্ধর্ষ ডাকাতির মাধ্যমে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা লুট হয়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং ১৫, তাং-০৮/০১/১৭ ইং। পরবর্তীতে উক্ত কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক আহমেদ পাটোয়ারী র‌্যাব বরাবর বর্ণিতবিষয়ে একটি অভিযোগনামা প্রদান করেন। ঘটনার বিবরণে জানা য়ায়, উক্ত ডাকাত দল গার্মেন্টসটির ভল্ট ভেঙ্গে ফ্যাক্টরীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন এবং বিবিধ হিসাবের মোট ৩,৪০,৫১,০০০.০০ (তিন কোটি চল্লিশ লক্ষ একান্ন হাজার টাকা, ২৫,০০০ ডলার সমমূল্যের টাকা সহ) লুট করে নিয়ে যায়, যাগার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ গত ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জন্য গত ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে গার্মেন্টসটির ভল্টে জমা রেখেছিল। পরদিন সকালের শিফটের নিরাপত্তারক্ষীরা গার্মেন্টসে প্রবেশ করে ০৪ জন গার্ডকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পায় এবং অপর ০২ জন নিরাপত্তারক্ষী মোঃ আব্দুল খালেক মিয়া ও মোঃ আলম শিকদার ঐ ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ থাকে।জানা যায়, উক্ত নিখোঁজ গার্ডদ্বয় অন্যান্য ০৪ জন গার্ডক কোমল পানীয় সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে; এরপর তাদের অন্যান্য বহিরাগত সহযোগীদের সহায়তায় ডাকাতি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। নিরাপত্তাকর্মী মোঃ আব্দুল খালেক এবং আলম শিকদার পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ভূয়া/ছদ্ম নাম-ঠিকানা, ভূয়া ইউনিয়ন পরিষদ সনদ ব্যবহার করে Institute of Safety, Security and Information Technology (ISSIT) এর মাধ্যমে উক্ত গার্মেন্টসে ঘটনার কিছুদিন পূর্বে গার্ড হিসাবে নিযুক্তি পায়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে।প্রাথমিকভাবে সংগৃহিত সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঘটনা সম্পর্কীয় কিছু আংশিক তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়। উক্ত সিসিটিভি ফুটেজে উক্ত গার্মেন্টসে নিয়োজিত দুইজন গার্ড ও বহিরাগত কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। কিন্তু নিয়োগকৃত নিরাপত্তা কর্মীরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছিল বিধায় বিস্তারিত গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রয়োজনীতা অনুভূত হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব তার গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে ঘটনার বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষন ও বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব উদঘাটন করে যে, আব্দুল খালেক নামে ছদ্ম নাম পরিচয়ধারী গার্ডেরপ্রকৃত নাম মাহবুবুর রহমান এবং আলম শিকদারের প্রকৃত নাম ফারুক হোসেন। অতঃপর র‌্যাব অপরাধীদের ধৃত ও লুন্ঠিত টাকা উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে ও অভিযান পরিচালনা করা হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব তার আভিযানিক কার্যক্রম আরও বেগবান করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখ ভোর ০৪:০০ ঘটিকা হতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখ রাত ০৩:০০ ঘটিকা পর্যন্ত এক যোগে খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল, ঢাকা ও গোপালগঞ্জ এর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালন করে (১) মাহবুবুর রহমান @ ফিরোজ মোল্লা @ আব্দুল খালেক মিয়া (৫১), পিতাঃ হাজী আব্দুস সোবাহান মোল্লা, গ্রামঃ সবুজবাগ ব্রীজ সংলগ্ন, সোনাডাঙ্গা, থানাঃ সোনাডাঙ্গা, জেলাঃ খুলনা, (২) খলিলুর রহমান রানা @ রানা সরদার @ রানা @ ফিরোজ (৪০), পিতাঃ মৃত মুক্তার আলী, গ্রামঃ ২০২/১ রাতুল ভিলা, থানা ও জেলাঃ গোপালগঞ্জ, (৩) বেলায়েত হোসেন আকন্দ @ বেলায়েত (৪২), পিতাঃ মৃত আব্দুল মজিদ আকন্দ গ্রামঃ সাংঘড়, থানাঃ রাজাপুর, জেলাঃ ঝালকাঠি, (৪) ইকবাল হোসেন রুবেল @ রুবেল (৩৭), পিতাঃ খলিলুর রহমান, গ্রামঃ হানুয়া, থানাঃ বাকেরগঞ্জ, জেলাঃ বরিশাল, (৫) ফারুক হোসেন @ বাবুল @ মোঃ আলম সিকদার (৫০), পিতাঃ মৃত হোসেন আলী মিয়া, গ্রামঃ নারায়নপুর মধ্যেপাড়া, থানাঃ নবীনগর, জেলাঃ বি-বাড়িয়া, (৬) উজ্জল বিশ্বাস (৩৪), পিতাঃ মৃত মোহন বিশ্বাস, গ্রামঃ মৌলভীপাড়া, থানাঃ সদর, জেলাঃ গোপালগঞ্জ’দেরকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও উক্ত গার্মেন্টসের লুট হওয়া টাকার মধ্যে ১ কোটি১৭ লক্ষ টাকা ও ১১শ ইউএস ডলার উদ্ধার করা হয়। আসামীদের প্রাথমিক দেওয়া তথ্য মতে তারা ০১টি ট্রাক ক্রয় (উদ্ধার), গার্মেন্টস মেশিন ক্রয় (উদ্ধার), বেনামে জমি ক্রয়, ব্যবসায় বিনিয়োগ, পোষ্ট অফিসও ব্যাংকে নামে-বেনামে সঞ্চয়, কর্জে প্রদান এবং আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ইত্যাদি কাজে অবশিষ্ট অর্থ ব্যয় করেছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আরও টাকা উদ্ধার হতে পারে। এছাড়াও ডাকাতিকালে ভল্ট ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত ০২টি লোহার শাবল, পরিহিত জ্যাকেট, লুন্ঠিত উঠজ, ০১টি পিস্তল, ০২টি ম্যাগাজিন, ০৫ রাউন্ড গুলি, ০২টি ছোরা ও ০১টি চাপাতি সহ অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, মাহবুবুর রহমান এবং খলিলুর রহমান রানা এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। পূর্ব পরিকল্পনার ভিত্তিতে মাহবুব ও ফারুক ভূয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে Institute of Safety, Security and Information Technology (ISSIT) গত ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ মাসে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকুরী নিয়ে উক্ত গার্মেন্টসে নিরাপত্তা রক্ষীর নিয়োগ পায়। মাহবুব বরিশাল জেলার একটি ঠিকানা এবং ফারুক পটুয়াখালীর একটি ঠিকানা ব্যবহার করেছিল। রুবেল তাদের এ সংক্রান্ত বিবিধ ভূয়া সনদ সরবরাহ করেছিল। এক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দুই গার্ডের প্রদানকৃত ভূয়া নাম ও ঠিকানার সঠিকতা যাচাই করেনি বলে জানা যায়। ঘটনার তিনদিন আগে থেকেই অন্যান্য সহযোগীরা (রানা , রুবেল ও বেলায়েত) বিভিন্ন সময়ে উক্ত গার্মেন্টস এলাকায় পর্যবেক্ষণ করে। ঘটনার তারিখ ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ দিবাগত রাত্রে নিরাপত্তারক্ষী ধৃত আসামী মাহবুব এবং ফারুক সহঅপর ০৪ জন ডিউটিরত (রাত ১০০০ ঘটিকা হতে ভোর ০৬০০ ঘটিকা পর্যন্ত) ছিল। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আসামী মাহবুব ও ফারুক বিস্কুট ও পানীয় এর সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে অপর ০৪ জন নিরাপত্তা রক্ষীদের অচেতন করে। নিরাপত্তা রক্ষীদের অচেতন অবস্থা নিশ্চিত করে আসামী মাহবুব এবং ফারুক গভীর রাত্রিতে গার্মেন্টসের বাহিরে অপেক্ষমান অন্যান্য ডাকাত রানা, রুবেল ও বেলায়েতদের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে ভল্ট ভেঙ্গে লুণ্ঠন কার্যক্রম শুরু করে। ডাকাতরা সিসি টিভিতে ধরা না পড়ার নিমিত্তে ভুল একটি সার্ভার অপসারন ও লুণ্ঠন করে। ডাকাতরা ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে রাত্র ০১:১৫ ঘটিকা থেকে রাত্র ০৩:৩০ ঘটিকা পর্যন্ত ডাকাতি করে; ঐ স্থানেই ভাগাভাগি করে একাধিক ব্যাগে ভরে টাকা নিয়ে যার যার মত গোপন আশ্রয়ে চলে যায়। আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লুন্ঠিত টাকা ভাগাভাগিতে মাহবুবুর রহমান ৭০ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা ও ১০ হাজার ইউএস ডলার; ফারুক হোসনে ৭০ লক্ষ টাকা ও ২ হাজার ইউএস ডলার; খলিলুর রহমান রানা ৭০ লক্ষ টাকা ও ১০ হাজার ইউএস ডলার; বেলায়েত হোসেন৫০ লক্ষ টাকা ও ১ হাজার ইউএস ডলার এবং ইকবাল হোসেন ৬০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও ২ হাজার ইউএস ডলার সহ সর্বমোট ৩ কোটি ২০ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা এবং ২৫ হাজার ডলার (১৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা সমমূল্যের)সর্বসাকুল্যে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। আসামীরা জানায় ইতিপূর্বেও তারা উক্ত ফ্যাক্টরীতে ডাকাতির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গামের্ন্টস এ সংস্কার কাজ চলমান থাকার কারণে তা সম্ভব হয় নাই। প্রাথমিকভাবে তারা ০৫ জন (মাহবুব, খলিলুর, বেলায়েত, ইকবাল ও ফারুক) মিলে স্বশরীরে ডাকাতি করেছে বলে জানায় এবং উজ্জল জ্ঞাতসারে রানা কর্তৃক লুটকৃত টাকার মধ্যে ৯ লক্ষ টাকা গচ্ছ্বিত রাখে। যা গোপালগঞ্জের একটি ব্যাংকে রক্ষিত আছে বলে উজ্জল প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দেয়। এছাড়াও আসামীদের নিকট অবশিষ্ট টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, লুটকৃত টাকার একাংশ ঝালকাঠি সহ অন্যান্য আরওব্যাংকে নামে/বেনামে গচ্ছ্বিত রয়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা বের হতে পারে। আসামীদের ভাষ্যমতে, তারা একটি সংঘবদ্ধ পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য। এদলের ০৪ জন সদস্য গার্মেন্টস কেন্দ্রিক চাকুরী/ব্যবসার সাথে জড়িত এবং অন্যান্যরা অন্য ব্যবসা কেন্দ্রিক পেশায় জড়িত। মাহবুব ওফারুক গার্মেন্টস কোম্পানীতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে একাধিকবার বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকুরি করেছে। রানা গার্মেন্টসের লটের ব্যবসা করে এবং রুবেলের মিরপুরে-১ এ ‘রোজ ফ্যাশন’ নামে একটি গামেন্টসের কাপড়ের দোকান রয়েছে। রানা ও রুবেল লুন্ঠিত টাকা দিয়ে ছোট খাটো একটি গার্মেন্টস চালু করার উদ্দেশ্যে ১৫টি গার্মেন্টস মেশিনারীজ ক্রয় করেছিল বলে জানায়। অপর সদস্য বেলায়েত বর্তমানে ঝালকাঠিতে হাঁস-মুরগির খামার ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের সহযোগী উজ্জল গোপালগঞ্জে মোবাইল ও টেলিকমব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের অধিকাংশ সদস্যরা ইতিপূর্বে একাধিক ডাকাতি ওহত্যা মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানায়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৫ সালেও মাহবুব, ফারুক ও রানাবাড্ডার শমসের গার্মেন্টস এ একই প্রক্রিয়ায় ডাকাতি করে বিপুল পরিমাণ টাকা লুণ্ঠন করেছিল। এ সংক্রান্ত ০১টি মামলার আসামী বলে তারা জানায়। এছাড়া আসামী বেলায়েত হোসেন এর বিরুদ্ধেও ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ থানায় ইসলামী ব্যাংক এবং চাঁদপুর মডেল থানায় একটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির মামলা আছে। অপর আসামী রুবেলের বিরুদ্ধে বরিশাল কোতয়ালী থানায় ০১টি হত্যা মামলা রয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

দেশের ৩১টি জেলার ও ৭৮টি উপজেলায় বিআরটিসির বাস চলাচল করছে

গাইবান্ধা-১ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী

প্রান্তিক চাষীদের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা