দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার প্রায়ছয় বছর ধরে চলা দুঃস্বপ্নের দায় কে নেবে

বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পে 'দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের' অভিযোগ কানাডার আদালতে খারিজ হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটল বলে আমরা মনে করি। খোঁড়া অভিযোগ তুলে মূল অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর সরকার যদিও নিজস্ব অর্থায়নে ইতিমধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে, ওই অভিযোগ বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে একটি প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রয়েছিল। আমাদেরমনে আছে, দুর্নীতি দমন কমিশনও প্রায় দুই বছর অনুসন্ধান, তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযোগটিকে অমূলক বলেছিল। আমরা স্বস্তির সঙ্গে দেখলাম, কানাডার আদালতও অভিযোগটিকে গালগল্প হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, দীর্ঘসূত্রতা, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার প্রায়ছয় বছর ধরে চলা দুঃস্বপ্নের দায় কে নেবে? এটা ঠিক, বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পরও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থেমে থাকেনি। ইতিমধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ, নদীশাসন সম্পন্ন হওয়ার পর মূল সেতুর পিলার বসানোর কাজও শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি স্থল যোগাযোগ স্থাপনে কয়েক দশকের স্বপ্ন পূরণ হবে। এও অনস্বীকার্য যে, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া এক অর্থে 'শাপে বর' হয়েছিল। এই প্রকল্প প্রমাণ করেছে যে, বিদেশিদের আর্থিক সহায়তা ছাড়াও এ ধরনের বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণের সদিচ্ছা ও সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। আমাদের মনে আছে, জাজিরায় নদীশাসন কাজ উদ্বোধনেরপর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, 'আমি চেয়েছিলাম, আমরা পারি, আমরা তা দেখাব। আজ আমরা সেই দিনটিতে এসে পেঁৗছেছি।' আমরা দেখেছি, বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর দেশের সাধারণমানুষও সরকারের প্রত্যয় সমর্থন করে রাষ্ট্রীয় তহবিলে অর্থ জমা দিয়েছে। যদিও প্রায় ২৯ হাজার কোটিটাকার প্রকল্পে ওই অর্থ পরিমাণগত দিক থেকে খুব বেশি নয়; কিন্তু এর তাৎপর্য বিশাল।
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এ দেশেরই কোনো কোনো রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক মহল দুর্নীতির ওই অভিযোগে বরং অকারণ হাওয়া দিয়েছে। প্রমাণ ছাড়াই সুর মিলিয়েছে বিদেশি অর্থকরী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বিদেশেরই একটি আদালতে অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার পর তারা এখন কী বলবেন? আদালতের রায়ের পর দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে, তাও দুর্ভাগ্যজনক। দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্নে এত বড় বিজয়কে স্বাগত না জানিয়ে নিছক রাজনৈতিক বিরোধিতার জন্য বিএনপি মহাসচিব যেভাবে 'দুর্নীতির অভিযোগই বিবেচ্য, আদালতের রায় নয়' বলেছেন, তা দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করাই স্বাভাবিক।
সরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই এই লড়াইয়ে হাল ছেড়ে না দেওয়ার জন্য। বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, ঘরে-বাইরে প্রতিবন্ধকতা, তৃতীয়বিশ্বের একটি দেশের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নির্মিত পদ্মা সেতু প্রকল্প কেবল দেশের যোগাযোগ,অর্থনীতি ও উন্নয়নের পথে নয়, ভাবমূর্তির ক্ষেত্রেও মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমাদের সামর্থ্যের উচ্চ মাপকাঠি হিসেবে প্রমত্ত পদ্মার বুকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে থাকবে। #PadmaBridge #Bangladesh

Comments

Popular posts from this blog

দেশের ৩১টি জেলার ও ৭৮টি উপজেলায় বিআরটিসির বাস চলাচল করছে

গাইবান্ধা-১ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী

প্রান্তিক চাষীদের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা