ব্রিফিং : এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

তারিখ : ২০ জানুয়ারী ২০১৭
ব্রিফিং : এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, আস্সালামু আলাইকুম। শুক্রবার ছুটির দিনেও আমাদের ডাকে আজকের প্রেসব্রিফিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। গত কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ৭ খুন মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে। যদিও রায় কার্যকর নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে, তবুও এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপিসহ সারাদেশের মানুষ। এ রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের নানারকম বক্তব্য গণমাধ্যমে আসছে। আজকে সাধারণ মানুষসহ অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, সেসময়ের আওয়ামী লীগ প্রধানসহ নেতাকর্মীদের বক্তব্য। মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশেই আলোচিত এই ৭ খুন মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। শুধু তাই নয়, র‌্যাবের আলোচিত উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের গ্রেফতারও করা হয় উচ্চ আদালতের নির্দেশেই। তখন সরকার প্রধান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতারা উচ্চ আদালতের কত সমালোচনাই না করেছিলেন। সাংবাদিক বন্ধুরা, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে র‌্যাব-১১ ছিল কসাই খানা। সাত খুন ছাড়াও র‌্যাব ১১ এর অধীনে কমপক্ষে ১১জন নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। দায় সারাভাবে তদন্ত চাপা পড়ে আছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও খবর বেরিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের তৎকালীন হেডকোয়ার্টারটি রীতিমতো কসাই খানায় পরিণত হয়েছিল। সরকারের এক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাউকে পাত্তা দিতেন না। তার ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে তাদের সহযোগীরা সেসময় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তাদের কাছে মানুষ খুন করা ছিল অনেকটা পাখি শিকারের মতো। তাই আলোচিত এ সাত খুন নয়, এর আগেও তারা কমপক্ষে ১১ ব্যক্তিকে প্রথমে গুম, পরে নৃশংসভাবে প্রায় একই কায়দায় খুন করে লাশ গায়েব করে দেয়। র‌্যাব-১১ এর আওতাধীন এলাকা ছিল নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলা। সে কারণে ওই সময় এসব জেলায় গুম-খুনের যেসব ঘটনা ঘটে, তার সঙ্গে র‌্যাবের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে অনেকে আশংকা করেন। বিএনপি’র সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ লাকসাম থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে র‌্যাবের হাতে অপহরণের শিকার হন। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর লাকসাম থেকে তিনি কুমিল্লা যাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ ও পৌর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন। পথে র‌্যাবের লোকজন তাদের তিনজনকে তুলে নেয়। কিন্তু সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজকে আটকে রেখে জসিম উদ্দিনকে ছেড়ে দেয় র‌্যাব। রাজনৈতিক গ্রেফতার ভেবে হিরু ও পারভেজের পরিবার আদালতের দিকে চেয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও তাদের খোঁজ মেলেনি। ২০১৪ সালের ১৮ মে আদালতের শরণাপন্ন হয় পরিবারের সদস্যরা। তারা র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গুমের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসামী করা হয়। এজাহারে সাক্ষী করা হয় র‌্যাব এর এক সদস্যকে। কারণ জসিম উদ্দিনকে ওই র‌্যাব সদস্য থানায় সোপর্দ করেন। স্পর্শকাতর এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় লাকসাম থানা পুলিশ। কিন্তু যথারীতি র‌্যাবের সংশ্লিটতা নেই মর্মে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেয়া হয়। এই প্রতিবেদন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রানু। তিনিও আদালতে নারাজি পিটিশন দেন। ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর র‌্যাব-১১’র হাতে নির্মমভাবে খুন হন লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. ফয়েজ আহমেদ। র‌্যাবের নেতৃত্বে পোশাক পরিহিত র‌্যাব সদস্যরা ডা. ফয়েজ আহমেদকে গ্রেফতারের জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তাকে বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে আটক করে র‌্যাব। কিন্তু কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে ডা. ফয়েজ আহমেদকে তারই বাড়ির ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তারেক সাঈদের নির্দেশে তার ওপর (ডা. ফয়েজ) কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। এরপর বাড়ির ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান ডা. ফয়েজ আহমেদ। এমনিভাবে নারায়ণগঞ্জের সেই ৭ খুনের সাথে জড়িত র‌্যাবের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চলে গুম-খুনের রাজত্ব। বন্ধুরা আওয়ামী লীগ ৭৪-৭৫ থেকে গুমের রাজত্ব শুরু করলেও বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীকে গুম করে পূণরায় গুম-খুন-অপহরণে মেতে ওঠে। আজও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর খোঁজ মেলেনি। বিগত কয়েক বছরে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, বিএনপি নেতা সুমন, ছাত্রনেতা মুন্না, জাকিরসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে গুম করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজও তাদের কোনো হদিস নেই। তাদের পরিবারের স্বজনরাও এখনও চোখের জলে বুকভরা আশা নিয়ে তাদের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। এখনও প্রতিদিন গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিভিষিকা এক ভয়াবহ রুপ লাভ করেছে। তাই আমি নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখী করার জন্য মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন, ঠিক তদ্রুপ ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া শত শত বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা এবং অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে জোরালো আহবান জানাচ্ছি। বর্তমানে দেশে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, এখানে নি:শব্দে ক্রন্দনও করা যায় না। কান্নার আওয়াজেও বিপদ ঘটতে পারে। সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি  রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শেষ করেছেন। সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠন করবেন এমন প্রত্যাশা শুধু বিএনপি’র নয়, এদেশে প্রতিটি নাগরিকের। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে সকলের মনে আশার বদলে নিরাশা উঁকি দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রধান থেকে শুরু করে তাদের সাধারণ সম্পাদক ও শীর্ষস্থানীয় নেতারা যেভাবে ধমকের সুরে কথাবার্তা বলছেন, তাতে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনে শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন কী না সে বিষয়ে সন্দেহের উদ্রেক হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিএনপিসহ দেশবাসী রাষ্ট্রপতির প্রতি আস্থা রাখতে চাই, কিন্তু তিনি যদি আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে দলীয় লোকদের দিয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করেন তাহলে তা জনগণ মানবে না। শুধুতাই নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কথাবার্তায় প্রকৃত গণতন্ত্রের কোনো বার্তা বহন করেনি, বরং সেই বক্তব্যে ভোটারবিহীন আরেকটি ৫ই জানুয়ারী মতো ভোটার শুণ্যের ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার অঙ্গীকার ফুটে উঠেছে। অবৈধ ক্ষমতাকে কেউ ছাড়তে চায় না, কারন ক্ষমতার মজা একটি অগণতান্ত্রিক গণবিরোধী মনকে আরো বেশী লোভী করে তোলে। বেশিদিন জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকাটা একটি অগণতান্ত্রিক শাসককে আরো বেশী স্বার্থপর, জেদি ও অহঙ্কারী করে তোলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে সেটিরই প্রতিফলন ঘটেছে। বন্ধুরা আপনারা দেখেছেন রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সময় বলেছেন দেশের শান্তি শৃঙ্খলা এবং গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হওয়া উচিত। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা তা নাকচ করে দিচ্ছেন। এটি রাজনীতির ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত ও অন্ধকারময় এবং সংঘাতপূর্ণ করে তুলবে। আর এজন্য সকল দায়িত্ব শাসক গোষ্ঠীর। আমরা আবারো আহবান জানাচ্ছি-দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নাগরিক অধিকারের জন্য গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই, তাই অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে সব দলের সাথে সংলাপ অতীব জরুরী। ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

Comments

Popular posts from this blog

দেশের ৩১টি জেলার ও ৭৮টি উপজেলায় বিআরটিসির বাস চলাচল করছে

গাইবান্ধা-১ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী

প্রান্তিক চাষীদের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা