পদ্মা ও মেঘনাসহ মোট ৪০৫টি নদী, ৬ হাজার ৫৩৬টি খাল এবং ১৮ হাজার ৪০৩টি পুকুর খনন করা হবে

সারা দেশের নদ-নদী, ছোট-বড় খাল ও পুকুর খননে মহাপরিকল্পনা বা মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এর আওতায় পদ্মা ও মেঘনাসহ মোট ৪০৫টি নদী, ৬ হাজার ৫৩৬টি খাল এবং ১৮ হাজার ৪০৩টি পুকুর খনন করা হবে
.......... ♣
মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রায় চূড়ান্তের পথে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রায় সাতগুণ। আগামী ১৫ বছরে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তিনটি মন্ত্রণালয়কে। কোন সংস্থা কী কাজ করবে, কোন নদী বা খাল খনন করবে তাও ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নদী ও খালের ওপর সমীক্ষা ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে এ মহাপরিকল্পনা। ফলে নদী খনন করে নাব্য বৃদ্ধি ও নদীরপাড় ভাঙন রোধে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিক্ষিপ্ত ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খসড়া মহাপরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মহাপরিকল্পনা তৈরির আগে নদী ও খালের ওপর সমীক্ষা করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর কাছে থাকা প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে এ মহাপরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে ড্রেজিংয়ের আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে এক থেকে দুই বছর সময়ের প্রয়োজন হবে। নদী-খালেরপ্রকৃতগভীরতা পরিমাপ করতে শুষ্ক ও বর্ষা উভয় মৌসুমে এ স্টাডি পরিচালনা করার কথা বলা হয়েছে।মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করেছে ‘ড্রেজিং সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটি’। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটিতে সাতজন সিনিয়র সচিব/সচিব, নৌবাহিনীর সহকারী প্রধান ও পানি উন্নয়নবোর্ডের মহাপরিচালক সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া সেন্টার ফর ইনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) ও ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) নির্বাহী পরিচালক এবং বুয়েটের পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক কমিটির সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। মহাপরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, দেশের নদীগুলোতে যে পরিমাণপলিমাটি আসে তা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। পলিমাটির কারণে নাব্য কমে গেছে, নদীর প্রশস্ততা বেড়ে যাচ্ছে এবং বন্যা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে নদীগুলোকে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে এবং পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার বাড়াতে মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।এর আগে কখনও নদীকেন্দ্রিক মাস্টারপ্ল্যান করা হয়নি। আমরা মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেব। তার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। জানা গেছে, এমহাপরিকল্পনা যে তিনটি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে সেগুলো হলো- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এসব মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো দুইধাপে খনন কাজ পরিচালনা করবে। তবে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু সীমাবদ্ধতাওরয়েছে। কারণ খনন কাজ পরিচালনার জন্য যতগুলো ড্রেজার প্রয়োজন তা সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। সারা দেশের নৌপথ খননে আট শতাধিক ড্রেজারের প্রয়োজন। তবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)কাছে মোট ড্রেজার আছে মাত্র ৬৫টি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ভুক্তলোকাল গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের (এলজিইডি) কোনো ড্রেজার নেই। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চাহিদার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ড্রেজার সরকারি সংস্থাগুলোকে ক্রয়ের সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি ড্রেজার বেসরকারি খাত থেকে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া তিন সংস্থার জনবল সংকট রয়েছে। খননেরমাটি ফেলার জন্য নদী বা খালের পার্শ্বে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে।মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পৃথক ড্রেজিং সংস্থা গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ড্রেজিংয়ের পলি নদীতে ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হচ্ছে। ড্রেজিং কার্যক্রমের কাছাকাছি এলাকায় নির্দিষ্ট জমিতে ওই পলি ফেলার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা আসছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নৌপথের গভীরতা ও দৈর্ঘ্য বাড়বে। এতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন আরও গতিশীল হবে। শিল্প-কারখানার পণ্য পরিবহন খরচ কমে আসবে। কৃষিকাজের সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে মাছের উৎপাদন। সুপেয় পানির চাহিদা মিটবে। নদীমাতৃক এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বেশি সুফল পাবেন। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যমে হচ্ছে নৌপথ। জানা গেছে, বর্তমানে দেশের নদীগুলোর দৈর্ঘ্য ২৪ হাজার কিলোমিটার। সারা বছর ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার নৌপথে যান চলাচলের উপযোগী থাকে।বর্ষা মৌসুমে নৌপথ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার কিলোমিটারে। নাব্য সংকটে বাকি পথে যান চলতে পারে না। মহাপরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের মোট ৪০৫টি নদীর মধ্যে তিনটি মিয়ানমারও ৫৪টি ভারতের সঙ্গেসংযুক্ত। ভাটির দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোতে প্রতি বছর ১ দশমিক ২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) ঘনমিটার পলি প্রবাহিত হয়। এর বড় অংশই নদীর তলদেশে জমে নাব্য সংকট সৃষ্টি করছে। মহাপরিকল্পনার আওতায় তিন প্রধান নদী যমুনা, পদ্মা ও মেঘনাসহ মোট ৪০৫টি নদী, ৬ হাজার ৫৩৬টি খাল এবং ১৮হাজার ৪০৩টি পুকুর খনন করা হবে। নদীগুলোতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। প্রধান তিন নদী খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৬২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। বাকি নদী, খাল ও পুকুর খননে ধরা হয়েছে ৬ লাখ ১১ হাজার ২০৭কোটি টাকা। এ কাজে সবমিলিয়ে ব্যয় হবে ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।জানা গেছে, প্রথম ধাপে পাঁচ বছর এবং দ্বিতীয় ধাপে ১০ বছর সবমিলিয়ে ১৫ বছরে এমহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পাঁচ বছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা এবং পরবর্তী ১০ বছরের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্বে থাকবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ সংস্থার জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ লাখ৯৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’রজন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা এবং এলজিইডির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। তিনটি সংস্থার কাজ নির্ধারণ করে দেয়ায় একই নদীতে একাধিক সংস্থার প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে দ্বৈততা পরিহারকরা যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। -----কৃতজ্ঞঃ যুগান্তর এর কাছে----

Comments

Popular posts from this blog

দেশের ৩১টি জেলার ও ৭৮টি উপজেলায় বিআরটিসির বাস চলাচল করছে

গাইবান্ধা-১ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী

প্রান্তিক চাষীদের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা