কলাম। মোসাদ এবং উপমহাদেশ।

ইদানীং আমাদের দেশের গুপ্তহত্যা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিত হামলার উদ্দেশ্য যে রাষ্ট্র ও সরকারকে দুর্বল করা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় উগ্রপন্থী সংগঠন, যাকে চলতি ভাষায় ‘জঙ্গি’ বলা হচ্ছে, সে ধরনের সংস্থা। এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আইএস ও আল-কায়েদা জড়িত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তথাকথিত ‘হোম গ্রোন’ জঙ্গিরা তেমনভাবে ধরা পড়ছে না। এরই প্রেক্ষাপটে হঠাৎ সরকারের উচ্চমহল থেকে উচ্চারিত হলো ইসরায়েল ও তার প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে দেশের বিশেষ রাজনৈতিক মহলের যোগসূত্রের বিষয়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলো ‘মোসাদ’-এর সম্পৃক্ততা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল। অবশ্য ইসরায়েল এ ধরনের অভিযোগ খণ্ডন করেছে। পরে মাননীয় মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে খণ্ডন করেছেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘মোসাদ’ আর ইসরায়েল নিয়ে আমাদের গণমাধ্যমে এত আলোচনা হয়েছে যে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষও মোসাদ নামক বিশ্বের অন্যতম দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার নামের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। মোসাদকে আখ্যায়িত করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত গুপ্তহত্যার মেশিন হিসেবে। ইসরায়েলি তথা ইহুদী রাষ্ট্রবাদীবিরোধী সক্রিয় নেতা অথবা ব্যক্তি, যাদের দ্বারা ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে অথবা হতে পারে—এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই গুপ্তহত্যার পথ বেছে নেওয়া হয়। খুব অল্প সময়ে মোসাদ তাদের বিস্তৃতি বিশ্বে ছড়িয়েছে।

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে মোসাদেরপরোক্ষ যোগাযোগের কথা জানা যায়, তবে একত্রে কোনো অপারেশনে তারা যুক্ত ছিল বা আছে—এমন তথ্য এখনো পাওয়া যায় না। তবে মোসাদের সঙ্গে ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সহযোগিতার ক্ষেত্র সংস্থাটির জন্মলগ্ন ১৯৬৮ সালে সেই ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ‘র’-এর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ থেকে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মোসাদ জড়িত ছিল।

মোসাদের জন্ম ডিসেম্বর ১৩, ১৯৪৮ সালে; ইসরায়েলের কথিত প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন গোরিয়নের হাতে। ডেভিড বেন গোরিয়ন ছিল জায়নবাদের কট্টর হোতা এবং ইসরায়েলে হিব্রু ভাষার প্রবর্তক। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে পোলিশ ইহুদি ডেভিড গোরিয়নতৎকালীন উসমানীয় শহর জেরুজালেমে ১৯০৬ সাল থেকে বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে বেন গোরিয়ন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রুভেন সিলোহাকে প্রথম পরিচালক পদে নিযুক্ত করে মোসাদ গড়ে তোলার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন। রুভেন সিলোহা ১৯৪৮ সালে ‘আরব লিগ’-এর সম্মিলিত ইসরায়েল আক্রমণের পরিকল্পনা হস্তগত করতে সক্ষম হন, যা ওই সময়ে ইসরায়েল রাষ্ট্রটিকে জন্মলগ্নের প্রথম ধাক্কা থেকে রক্ষা করেছিল। সেই ধাক্কা সামলানোর পর ইসরায়েল যেমন টিকে গিয়েছিল, তেমনি রুভেন সিলোহার হাতে মোসাদ ক্রমেই সংগঠিত হতে শক্তি সঞ্চয় করল। মোসাদের ওপর প্রাথমিক যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা হচ্ছে, যেসব দেশ ‘আলিহা’তে বিশ্বাসী নয়, সেসব দেশ থেকে ইহুদিদের ইসরায়েলে নিয়ে আসা এবং বিশ্বব্যাপী ইহুদিদের ও জায়নবাদীদের রক্ষার মাধ্যমে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিরোধীদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া। হিব্রু শব্দ ‘আলিহা’র অর্থ হচ্ছে বিশ্বে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ইহুদিদের ‘প্রমিজড় ল্যান্ড’ ইসরায়েলে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা।

মোসাদ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনা থেকে নাৎ​সি তথা জার্মানি হিটলারের গণহত্যার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডলফ আইখম্যানকে অপহরণ করে ইসরায়েলে নিয়ে আসা এবং বিচারের মুখোমুখি করানোর পর থেকে। শান্তিকালীন ওই ধরনের অভিযান ছিল অবিশ্বাস্য, যা আজও গোয়েন্দাকাহিনির অন্যতম শীর্ষ অভিযান। এরপর উগান্ডার এন্টেবি বিমানবন্দর থেকে জিম্মি উদ্ধার এবং ১৯৭২ সালে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামক পিএলওর কমান্ডো দ্বারা মিউনিখ অলিম্পিকে যোগদানকারী ১১ জন ক্রীড়াবিদকে হত্যার প্রতিশোধে ওই কর্মকাণ্ডে জড়িত একজন বাদে সবাইকে বিভিন্ন দেশে গিয়ে গুপ্তহত্যা করা। এর মধ্যে একজন ভুলবশত হত্যার শিকার হন। হালে হামাস নেতাদের কয়েকজনকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে মোসাদের বিরুদ্ধে।

উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে ভারত ছাড়াও নেপাল আর শ্রীলঙ্কায় ইসরায়েলের দূতাবাস রয়েছে। ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক ১৯৫০ সাল থেকে। ওই সময়ে নেহরুর সরকার বর্তমানের মুম্বাইতে ইসরায়েলকে ভারতীয় ইহুদিদের স্বেচ্ছায় ইসরায়েলে স্থানান্তরিত হতে সম্মতি দিয়ে অফিস খোলার অনুম​িত দিয়েছিল। ক্রমেই ওই অফিসটি কনস্যুলেটে পরিণত হয়। পরে ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। ১৯৯২ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং ‘র’ আর মোসাদ সম্পর্ক অটুট থেকে যায়। এ সম্পর্ক পাকিস্তানের গতিবিধির ওপরে নজর রাখা। এরপর থেকে বহু বিষয়েই এই দুই গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে গভী

Comments

Popular posts from this blog

দেশের ৩১টি জেলার ও ৭৮টি উপজেলায় বিআরটিসির বাস চলাচল করছে

গাইবান্ধা-১ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী

প্রান্তিক চাষীদের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা